ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে:

 

ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করবে: প্রয়োজনীয়তা নাকি বিভ্রান্তি?

ভূমিকা


রাজনীতি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অপরিহার্য অংশ। শিক্ষিত, সচেতন ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম ক্ষেত্র হলো ছাত্ররাজনীতি। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায়, ছাত্রদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—শুধু ছাত্রদের নিয়ে আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করা কি প্রয়োজনীয়, নাকি এটি নতুন বিভ্রান্তি তৈরি করবে?

ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্য ও ভূমিকা

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ছাত্ররাজনীতি বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) এবং মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)-এর মতো ঐতিহাসিক পরিবর্তনে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য।
কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি অনেকাংশে দলীয় স্বার্থের অধীন হয়ে পড়েছে, যেখানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নিজেদের রাজনৈতিক দল গঠনের দাবি ওঠা নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিচ্ছে।

ছাত্রদের আলাদা রাজনৈতিক দল গঠনের পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত

পক্ষে:
  1. নতুন নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ: প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে তরুণরা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ছাত্রদের আলাদা দল গঠনের মাধ্যমে নতুন ও সৎ নেতৃত্ব তৈরি হতে পারে।
  2. শিক্ষিত ও সচেতন রাজনীতি: ছাত্ররা একাডেমিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি আদর্শ দল গঠন করতে পারে, যা দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
  3. প্রচলিত দলের প্রভাবমুক্ত রাজনীতি: বর্তমানে বড় রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র সংগঠনকে নিজেদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আলাদা দল থাকলে ছাত্ররা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।
বিপক্ষে:
  1. অভিজ্ঞতার অভাব: শুধুমাত্র ছাত্রদের দিয়ে একটি কার্যকর রাজনৈতিক দল পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে, কারণ নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করতে সময় লাগে।
  2. শিক্ষার ক্ষতি: ছাত্রদের প্রধান কাজ হলো পড়াশোনা করা। রাজনীতিতে অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে পারে।
  3. বিভক্তি সৃষ্টি: যদি ছাত্ররা আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মতাদর্শের দ্বন্দ্বে জর্জরিত হতে পারে, যা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করবে।
  4. পরিণামে মূলধারার রাজনীতিরই প্রভাব: অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নতুন ছাত্র রাজনৈতিক দলও পরে প্রচলিত বড় দলগুলোর ছায়ায় চলে যায়, ফলে মূল সমস্যা থেকেই যায়।

পরবর্তী করণীয়

ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতা থাকা উচিত, তবে সেটি গঠনমূলক হতে হবে। যদি তারা আলাদা দল গঠন করতে চায়, তবে সেটি হতে হবে নীতিনির্ভর, সৎ ও শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য যেন রাজনীতির কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি।

উপসংহার

ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে, তবে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে কিভাবে ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তন আনা যায়, সে বিষয়ে সবাইকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। তাহলে ছাত্ররাজনীতি দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post